ভূমিকা:
“আমার সন্তান হাঁটতে পারে না, কিন্তু সে হাসে – এক পৃথিবী ভালোবাসা নিয়ে।”
এই কথাটি অনেক বাবা-মায়ের হৃদয়ছোঁয়া বাস্তবতা। সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) এমন একটি অবস্থা, যা শিশুর শারীরিক ক্ষমতা ও চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করে। তবে এই রোগ মানেই থেমে যাওয়া নয়। সঠিক সহায়তা ও সচেতনতায় এই শিশুরাও হয়ে উঠতে পারে সমাজের অনন্য অংশ।
সেরিব্রাল পালসি কী?
সেরিব্রাল পালসি (CP) একটি স্নায়বিক সমস্যা যা শিশুর জন্মের আগে, সময় বা পরবর্তীতে মস্তিষ্কের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটলে হয়। এটি মূলত চলাচল, শরীরের ভারসাম্য এবং মাংসপেশির নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে।
কারণসমূহ:
-
গর্ভকালীন সংক্রমণ (যেমন টক্সোপ্লাজমোসিস, রুবেলা)।
-
জন্মের সময় অক্সিজেনের অভাব।
-
অপরিণত প্রসব বা প্রিম্যাচিওর বেবি।
-
শিশু অবস্থায় ইনফেকশন বা মাথায় আঘাত।
জর (জ্বর), নিউমোনিয়া, জন্ডিস ইত্যাদির কারণে খিঁচুনি (seizure) হলে ।
লক্ষণ ও ধরন:
✅ সাধারণ লক্ষণ:
-
হাঁটতে বা বসতে দেরি হওয়া
-
মাংসপেশির শক্তি বা টোন অস্বাভাবিক
-
কথা বলার সমস্যা
-
খাওয়ার সময় গিলতে সমস্যা
মাংসপেশির কঠোরতা বা শক্ত হয়ে যাওয়া
📌 সেরিব্রাল পালসির ধরন:
-
Spastic CP – পেশি শক্ত হয়ে যায়
-
Dyskinetic CP – অস্বাভাবিক অঙ্গচালনা
-
Ataxic CP – ভারসাম্যের সমস্যা
-
Mixed CP – একাধিক উপসর্গ মিলে যায়
চিকিৎসা ও সেবা:
-
🧘 ফিজিওথেরাপি – পেশি নমনীয় রাখে
-
🗣️ স্পিচ থেরাপি – কথা বলার সক্ষমতা বাড়ায়
-
🧠 অকুপেশনাল থেরাপি – দৈনন্দিন কাজ শেখায়
-
💊 ওষুধ – খিঁচুনি বা পেশি সংকোচ কমাতে
-
🛠️ সহায়ক যন্ত্র – হুইলচেয়ার, হাঁটার সহায়তা ইত্যাদি
প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা:
❌ “সেরিব্রাল পালসি মানে মানসিক প্রতিবন্ধকতা” – সবসময় নয়
❌ “এই শিশুরা কিছু করতে পারে না” – সম্পূর্ণ ভুল
✅ তারা শিক্ষিত, সৃজনশীল এবং সফল জীবন কাটাতে পারে
আপনি কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?
-
সচেতনতা ছড়ান
-
প্রতিবন্ধী বান্ধব পরিবেশ তৈরি করুন
-
স্কুল ও সমাজে অন্তর্ভুক্তিমূলক মনোভাব গড়ুন
-
স্থানীয় সহায়তা সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবক হোন
একজন বীরের গল্প:
সাবিহা যখন জন্মায়, তখনই ডাক্তাররা কিছুটা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। জন্মের সময় তার শরীর একদম নিস্তেজ ছিল, কান্নাও ঠিকঠাক শোনা যায়নি। প্রথম কয়েক মাসে পরিবারের চোখে পড়ে—সে ঠিকমতো ঘাড় সোজা করতে পারে না, বসতে শেখে না, এমনকি চোখে চোখ রেখে তাকায় না।
তিন বছর বয়সে ডাক্তাররা নিশ্চিত করেন—সাবিহার সেরিব্রাল পালসি হয়েছে।
এটা যেন পরিবারের জন্য আকাশ ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা। বাবা-মা অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলেন, কিন্তু হাল ছাড়েননি। তারা খুঁজতে শুরু করলেন চিকিৎসা ও থেরাপির পথ। সাবিহাকে নিয়ে শুরু হলো দীর্ঘ পথচলা—নিয়মিত ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি, বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তি।
প্রথম এক বছরে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে, সাবিহা শব্দ উচ্চারণ করতে শুরু করে। হাঁটার চেষ্টা করে। সে যখন প্রথম “মা” বলে ডাকল, তখন তার মায়ের চোখে আনন্দে জল এসে গিয়েছিল।
আজ সাবিহা ৯ বছরের এক উজ্জ্বল শিশু। সে কথা বলতে পারে, হাঁটে সাহায্য নিয়ে, এবং সবচেয়ে বড় কথা—সে একটি শিশু নাট্যদলের সদস্য। মঞ্চে দাঁড়িয়ে দর্শকদের সামনে অভিনয় করে সে, কখনো কবিতা আবৃত্তি, কখনো ছোট গল্পে চরিত্র হয়ে ওঠে।
তার স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, “সাবিহার মুখে যে আত্মবিশ্বাস দেখি, তা অনেক সুস্থ-স্বাভাবিক শিশুর মধ্যেও দেখা যায় না।”
সাবিহা প্রমাণ করেছে—শারীরিক সীমাবদ্ধতা মানেই জীবন থেমে যাওয়া নয়। ভালোবাসা, অধ্যবসায়, ও সমাজের সহযোগিতাই পারে একজন শিশুর জীবনকে বদলে দিতে।
📞 আক্কেলপুর ফিজিওথেরাপি এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার
@akkelpurphysiotherapy Replying to @user441015843 ♬ original sound - Akkelpur Physiotherapy Center

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ I যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন 01314924286